Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষক পর্যায়ে আউশ ধান বীজ সংরক্ষণ কৌশল

আউশ ধানের চাষ বাংলাদেশের প্রাচীনতম চাষের অন্যতম। বর্তমানে দেশে মোট উৎপাদিত চালের মাত্র ৭% আসে আউশ ফসল থেকে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে  মোট ১০.৫১ লাখ হে. জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছে এবং তা থেকে ২৩.২৬ লাখ মেটন চাল পাওয়া গিয়েছে। বর্তমান ২০১৪-১৫ মৌসুমে ১১.৬০ লাখ হেক্টর জমিতে  আউশ ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা থেকে ২৪.২৮ লক্ষ মেটন চাল পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।

ফসল উৎপাদনের যে কোনো প্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়নের মূলভিত্তিই হলো মানসম্মত বীজ। ভালো স্বাস্থ্য ও সতেজ বীজ ব্যবহার করেই ফসলের ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব। বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ধান চাষের প্রতিটি স্তরে আধুনিক প্রযুক্তি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং সর্বোচ্চ ফলন পেতে হলে সঠিক জাত নির্বাচন, মানসম্মত বীজ ব্যবহার, বীজ বাছাই ও অন্যান্য পরিচর্যা, সঠিক সময়ে ও সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ, পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈবসার ব্যবহার, পরিমিত সেচ, যথা সময়ে ফসল কর্তন ও উন্নত পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করা জরুরি প্রয়োজন। আর তাই সব কৃষি উপকরণের মধ্যে গুণগত মানসম্পন্ন বীজের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। অন্য দিকে ভালো বীজ না হলে কৃষিক্ষেত্রে অন্যান্য বিনিয়োগ ফলপ্রসূ হবে না

সরকারিপর্যায়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাত করে আসছে। সম্প্রতি বেশ কিছু বেসরকারি বীজ প্রতিষ্ঠান বীজ সরবরাহ করায় আগের তুলনায় ভালো বীজের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে অধিকাংশ বীজই কৃষক নিজে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করে থাকে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে বীজ সংরক্ষণ না করাই বীজের গুণগতমান ঠিক থাকে না। তাই উন্নত পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করা হলে বীজের গুণগতমান সঠিক থাকবে। বীজ সংরক্ষণে কৃষকদের জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যায়ন কৌশল বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলা, উপজেলাপর্যায়ে চাষিদের ধান বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণবিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে।  

আউশ বীজ সংরক্ষণ বিষয়ে চাষি ভাইদের করণীয় : ফসল কাটা, মাড়াই এবং ধান বা বীজ ধান সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অধিক পাকা অবস্থায় ফসল কাটলে অনেক ধান ঝরে পড়ে, শিষ ভেঙে যায়, শিষ কাটা লেদা পোকা এবং পাখির আক্রমণ হতে পারে। তাই মাঠে গিয়ে ধান পেকেছে কিনা তা দেখতে হবে। বীজ ফসল সঠিক সময়ে কর্তন না করা হলে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়; যেমন অপরিপক্ব ফসল থেকে সংগৃহীত সব দানা বীজ হিসেবে উপযুক্ত নাও হতে পারে। অপরপক্ষে ফসল দেরিতে কর্তনের ফলে দানা ঝরে গিয়ে উৎপাদিত বীজের পরিমাণ কমে যেতে পারে এবং বীজ নিম্নমানের হতে পারে। এমনকি বীজের স্বাভাবিক রঙ নষ্ট হতে পারে, সেই সাথে বাজারমূল্যও কমে যেতে পারে। শিষের অগ্রভাগ থেকে ধান পাকা শুরু হয়। শিষের অগ্রভাগের ৮০% ধানের চাল শক্ত ও স্বচ্ছ এবং শিষের নিচের অংশ ২০% ধানের চাল আংশিক শক্ত ও স্বচ্ছ হলে ধান ঠিক মতো পেকেছে বলে বিবেচিত হবে। বীজ ধানের জন্য নির্বাচিত জমির আইলের পাশের ৬ ফুট বাদ দিয়ে ভেতরের অংশ হতে আলাদাভাবে ধান সংগ্রহ করা উচিত। রোগা ও পোকা আক্রান্ত জমি থেকে কোনোক্রমেই বীজ সংগ্রহ করা উচিত নয়। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে ধান কাটা উচিত। ফসল কর্তন ও পরিবহনে যাতে সংমিশ্রণ না ঘটে সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

কাটার পর ধান মাঠে ফেলে না রেখে যত সম্ভব মাড়াই করা উচিত। মাটি থেকে বীজ যাতে আর্দ্রতা শুষে নিতে না পারে তার জন্য  কাঁচা খলার ওপর ধানমাড়াই করার সময় চাটাই, মোটা চট, ত্রিপল বা পলিথিন বিছিয়ে দিতে হবে। আধুনিক বীজ মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে বীজ মাড়াই করলে বীজের গুণাগুণ ভালো থাকে। এভাবে ধান মাড়াই করলে ধানের রঙ উজ্জ্বল ও পরিষ্কার থাকে। ধান মাড়াইয়ের সময় যাতে অন্য জাতের বীজ মিশ্রিত না হয় সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে এবং সে জন্য মেঝে বা খলা থেকে অন্য জাতের ধান যতদূর সম্ভব দূরে রাখতে হবে।

মেঘলা দিন থাকলে ধান মাড়াই করা ও শুকানো কষ্টকর হয়। সে ক্ষেত্রে শিষ কেটে ছোট ছোট আঁটি বেঁধে ঘরের ভেতর ঝুলিয়ে রেখে শুকানো যায়। তা না হলে ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মাড়াই করা ধান অন্তত ৪ থেকে ৫ দিন রোদে ভালোভাবে  শুকানোর পর ঝেড়ে গোলাজাত করতে হবে।
  সব উপকরণ ঠিক রেখে কেবল মানসম্মত বীজ ব্যবহার করলে ধানের গড় ফলন ১৫ থেকে ২০% বৃদ্ধি করা সম্ভব। সুতরাং অধিক ফলন পেতে হলে ভালো বীজের প্রয়োজন। এজন্য যে জমির ধান ভালোভাবে পেকেছে, রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়নি এবং আগাছামুক্ত সেসব জমির ধান বীজ হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ধান কাটার আগেই বিজাতীয় গাছ সরিয়ে ফেলতে হবে।  বীজ রাখার ধান কেটে আনার পর আঁটি পালা দিয়ে না রেখে বাতাসে ছড়িয়ে রাখা প্রয়োজন। বীজ ধান ঠিকমতো সংরক্ষণ না করলে এক দিকে কীটপতঙ্গ ও ইঁদুর নষ্ট করে, অপর দিকে গজানোর ক্ষমতা কমে যায়। ফলে বীজ ধান থেকে আশানুরূপসংখ্যক চারা পাওয়া যায় না। বীজ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পর ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।  বীজ ধান কর্তন হতে পরবর্তী মৌসুমে বপনের পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত বিজ্ঞানসম্মতভাবে বীজ সংরক্ষণ করতে না পারলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা এবং চারা গজানোর শক্তি কোনোটাই ঠিক থাকে না। এজন্য নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা প্রয়োজন-

সংগৃহীত বীজ ভালোভাবে  ঝাড়াই করে অপরিপক্ব বীজ, রোগাক্রান্ত বীজ, খড়কুটা, ধুলাবালু ভালোভাবে পরিষ্কার করে বড় বড় পুষ্ট দানা বাছাই করে নিতে হবে। বীজ সংরক্ষণের আগে পর পর কয়েকবার রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে যেন বীজের আর্দ্রতা শতকরা ১২ ভাগের নিচে থাকে। দাঁত দিয়ে কাটলে যদি কট করে শব্দ হয় তাহলে বুঝতে হবে বীজ ঠিকমতো শুকিয়েছে।

যে পাত্রে বীজ রাখা হবে তাতে যেন কোনো ছিদ্র না থাকে।  অল্প পরিমাণ বীজ রাখার জন্য  তেলের ড্রাম কিংবা বিস্কুট বা কেরোসিনের টিন প্রভৃতি ধাতব পাত্র ব্যবহার করা ভালো।

ধাতব পাত্র ব্যবহার করা সম্ভব না হলে, মাটির মটকা, কলস বা পলিথিন যুক্ত চটের বস্তা অথবা চটের বস্তায় পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিক ড্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে। মাটির পাত্র হলে পাত্রের বাহিরের গায়ে আলকাতরার প্রলেপ দিতে হবে। পাত্রে বীজ রাখার আগে পাত্রগুলো আর্দ্রতামুক্ত করার জন্য ভালো করে রোদে শুকিয়ে নেয়া প্রয়োজন। রোদে শুকানো বীজ ঠাণ্ডা করে পাত্রে ভরতে হবে। পাত্রটি সম্পূর্ণ বীজ দিয়ে ভরাট করে রাখতে হবে। যদি বীজের পরিমাণ কম হয় তবে বীজের ওপর কাগজ বিছিয়ে তার ওপর শুকনো বালি দিয়ে পাত্র পরিপূর্ণ করতে হবে। এবার পাত্রের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করতে হবে যাতে পাত্রের মধ্যে বাতাস ঢুকতে না পারে।

বীজ পাত্র মাচায় রাখা ভালো, যাতে পাত্রের তলা মাটির সংস্পর্শে না আসে। গুদামে বায়ু চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। বীজ কখনো স্যাঁতসেঁতে জায়গায় রাখা ঠিক নয়।

সংরক্ষণ করা বীজ মাঝে মধ্যে পরীক্ষা করা দরকার যাতে কোনো প্রকার পোকামাকড় বা ইঁদুর ক্ষতি করতে না পারে। দরকার হলে মাঝে বীজ শুকিয়ে নিতে হবে। এতে বীজের আর্দ্রতা সঠিক থাকবে। প্রতি টন গুদামজাত বীজে ৩টি ফসটক্সিন ট্যাবলেট সর্বনিম্ন ৭২ ঘণ্টা ব্যবহারে গুদামের সব ধরনের পোকামাকড় মারা যায়। তবে জৈব বালাই ব্যবস্থাপনাই শ্রেয়।

টন প্রতি ধানে ৩.২৫ কেজি নিম, নিশিন্দা বা বিষকাটালি পাতার গুঁড়া, শুকনা তামাক দিয়ে গোলাজাত করলে পোকার আক্রমণ হয় না। এসব পাতা পোকামাকড় প্রতিরোধক।

আমাদের দেশে আউশ ধানের ভালো জাত  বেশি ছিল না। সম্প্রতি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত কয়েকটি আউশ ধানের জাত যেমন ব্রিধান-৪২, ব্রিধান-৪৩, ব্রিধান-৪৮, ব্রিধান-৫৫  মাঠপর্যায়ে ভালো ফলন দিচ্ছে। এসব জাত কৃষকপর্যায়ে উল্লিখিত পদ্ধতিতে সংগ্রহ ও সংরক্ষিত করা হলে মানসম্মত বীজের সহজলভ্যতা হবে, ফলে আউশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
 
কৃষিবিদ মো. রফিকুল হাসান*
* উপপরিচালক (মনিটরিং), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫

COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon